বাংলা চলচ্চিত্র পরিচালনায় ঋত্বিক ঘটকের অবদান




 চলচ্চিত্র পরিচালনায় ঋত্বিক ঘটকের অবদান আলোচনা করো।


 উঃ-    বিংশ শতাব্দীর একজন বিখ্যাত বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক হলেন ঋত্বিক ঘটক । ঋত্বিক ঘটক চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন নিমাই ঘোষের 'ছিন্নমূল'(১৯৫১) সিনেমার মধ্য দিয়ে । এখানে তিনি একই সঙ্গে অভিনয় ও সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন । এরপর ১৯৫২ সালে তাঁর একক পরিচালনায় মুক্তি পায় 'নাগরিক' সিনেমাটি । সিনেমাটি ১৯৫২ সালে তৈরি হলেও তা মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭৭ সালে। ষাটের দশকে ঋত্বিক ঘটক পরপর তিনটি ছবি বানান 'মেঘে ঢাকা তারা,(১৯৬০), 'কোমল গান্ধার'(১৯৬১), এবং 'সুবর্ণরেখা'। এই তিনটি চলচ্চিত্রকে একত্রে 'ট্রিলজি' বা 'ত্রয়ী চলচ্চিত্র' বলা হয়। সিনেমাগুলিতে তৎকালীন দেশভাগের যন্ত্রণা এবং উদ্বাস্তু জীবনের রুঢ় বাস্তবতা চিত্রিত হয়েছে । ১৯৭০ সালে তাঁর তৈরি 'তিতাস একটি নদীর নাম' এক অবিস্মরণীয় ও মহাকাব্যিক সৃষ্টি । ১৯৭৪ সালে 'যুক্তি-তক্কো আর গপ্পো' নামে তিনি আর একটি সিনেমা তৈরি করেন, এটিই তাঁর পরিচালিত শেষ ছবি।


      ঋত্বিক ঘটক মনেপ্রাণে ছিলেন মার্কসীয় আদর্শে বিশ্বাসী । তাই তাঁর পরিচালিত চলচ্চিত্র গুলিতে বামপন্থা ও মানবতাকে তিনি কখনোই উপেক্ষা করে যেতে পারেননি । অনেক সমালোচক ঋত্বিক ঘটকের সিনেমায় অতি নাটকীয়তা ও ভারসাম্যহীনতার কথা বললেও আজকের দর্শক জানেন তিনি ছিলেন সময়ের থেকে এগিয়ে থাকা একজন চিত্র পরিচালক । আবেগ মননে , সংলাপে, দৃশ্যের সংঘর্ষ নির্মাণে তাঁর সিনেমা ছিল অভিনব । তিনি সিনেমার মাঝে মাঝে এমন এমন কিছু কাব্য মুহূর্ত তৈরি করেন, যা দর্শকের মনকে নাড়িয়ে দিয়ে যায় । তাই এখন দেশে-বিদেশে ঋত্বিক চর্চার প্রসার ঘটেছে। এছাড়া পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক থাকাকালীন তিনি এমন এক ঝাঁক ছাত্র তৈরি করে গেছেন, যারা পরবর্তীকালে গোটা ভারতীয় সিনেমাকে নানাভাবে সমৃদ্ধ করেছে।



                        নৃপেন মাহাতো

                     মোঃ-৭০০১০০৯৫৭৭



Post a Comment

1 Comments